অ্যামিনো এসিড (Amino Acids): প্রোটিনের প্রধান গাঠনিক উপাদান হচ্ছে অ্যামিনো এসিড। নোবেল বিজয়ী Emil Fischer, 1902 খ্রিষ্টাব্দে প্রোটিন অণুর গাঠনিক একক হিসেবে অ্যামিনো এসিড আবিস্কার করেন। কোন জৈব এসিডের এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু অ্যামিনো (-NH.) গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপনের ফলে যে জৈব এসিড উৎপন্ন করে তাকে অ্যামিনে এসিড বলে। প্রোটিনকে জীবনের প্রথম জৈব যৌগ বলা হলেও অ্যামিনো এসিড জীবনের মৌলিক বস্তু হিসেবে চিহ্নিত। কারণ, অ্যামিনো এসিডের অণু শৃঙ্খলিত হয়ে প্রোটিন গঠিত
হয়। প্রোটিনকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করে ২০টির অধিক অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়। প্রতিটি অ্যামিনো এসিডে একটি অ্যামিনো
গ্রুপ (-NH2, amino group), একটি কার্বক্সিল গ্রুপ R – C-COOH
(-COOH. carboxyl group) ও একটি অ্যামিনো এসিড-এর নির্দিষ্ট গ্রুপ (R) থাকে।R গ্রুপ শুধু একটি হাইড্রোজেন অণু যেমন- গ্লাইসিন অ্যামিনো এসিড অথবা একগুচ্ছ অণু হতে পারে। উভয় গ্রুপ আলফা কার্বন নামক একটি চিত্রঅণুর সাথে যুক্ত থাকে। একটি অ্যামিনো এসিডের কাঠামো হলো C-C-N. উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন প্রকার অ্যামিনো এসিড আছে। এর মধ্যে বিশ প্রকার অ্যামিনো এসিড বিভিন্ন ভাবে সমন্বিত ও সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন রকম প্রোটিন তৈরি করে।
অ্যামিনো এসিড-এর বৈশিষ্টঃ
• মানবদেহে বিদ্যমান প্রায় সবগুলো অ্যামিনো এসিডই ৫-অ্যামিনো এসিড
• অ্যামিনো এসিড বর্ণহীন, স্ফটিকাকার পদার্থ
• এরা পানিতে দ্রবণীয়।
• বিশুদ্ধ প্রোটিনকে কোন রাসায়নিক পদার্থ "কিংবা এনজাইম-এর সাহায্যে সম্পূর্ণ আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়।
• এক বা একাধিক টাইপের অ্যামিনো এসিড পেপটাইড বন্ধনীর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে।
কাজঃ
* প্রোটিন সংশ্লেষ করা।
* ইউরিয়া সংশ্লেষে সহায়তা করা।
* দেহ গঠনে সাহায্য করা ।
* দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
* দেহে pH নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
* ইউরিয়া সংশ্লেষণে সাহায্য করা।
* দুগ্ধবতী মায়ের স্তনগ্রন্থিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো এসিড থেকে দুগ্ধপ্রোটিন কেসিনোজেন সংশ্লেষিত হয়।
* ত্বক, চুল ও চোখের কোরয়েড স্তরে বিদ্যমান মেলানিন রঞ্জক সৃষ্টিতে অ্যামিনো এসিড প্রধান ভূমিকা পালন করে।
অ্যামিনো এসিডের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Amino Acids):
জীবদেহে সর্বমোট ২০টির অধিক অ্যামিনো এসিড রয়েছে এবং এদেরকে মোটামুটি ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা - অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড, অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড, ও. হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনো এসিড।
১. অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড (Aliphatic amino acids) : যখন অ্যামিনো এসিডে সাধারণ সংকেতে প্রদত্ত R-এর নির্দিষ্ট গ্রুপটি অ্যালিফ্যাটিক যৌগ হয় তখন তাকে অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড বলে।
২. অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড (Aromatic amino acid) : অ্যামিনো এসিডের সাধারণ সংকেতে প্রদত্ত R এর নির্দিষ্ট গ্রুপটি অ্যারোমেটিক যৌগ হলে তাকে অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড বলে। এ জাতীয় অ্যামিনো এসিড দুটির নাম টাইরোসিন ও ফিনাইলঅ্যালানিন ।
৩. হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনো এসিড (Heterocyclic amino acid), অ্যামিনো এসিডে অ্যালিফ্যাটিক রাজ: অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিডের বিপরীত ধর্ম পরিলক্ষিত হলে সেই অ্যামিনো এসিডকে হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনে এসিড বলা হয়। উদাহরণ- ট্রিপটোফ্যান, প্রোলিন, হিস্টিডিন
সাধারণত ২০টি অ্যামিনো এসিড প্রোটিন গঠনে অংশগ্রহণ করে। এদেরকে প্রোটিন অ্যামিনো এসিড বলে।
এছাড়াও এমন অনেক অ্যামিনো এসিড আছে যেগুলো প্রোটিনের উপাদান নয়, তবে প্রোটিন সংশ্লেষণের সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে নন-প্রোটিন অ্যামিনো এসিড বলে। সাইট্রলিন, হেমোসেরিন, অরনিথিন এদের উদাহরণ।
বিশটি প্রোটিন অ্যামিনো এসিড হচ্ছে :
১। লিউসিন, ২। আইসোলিউসিন, ৩। লাইসিন, ৪। মেথিওনিন, ৫।ভ্যালিন, ৬/ সেরিন, ৭। প্রোলিন ৮। থ্রিওনিন, । অ্যালানিন, ১০। টাইরোসিন, ১১। হিস্টিডিন, ১২। অ্যাসপারাজিন, ১৯৩। সিস্টিন, ১৪'। আরজিনিন ১৯৯৫। গ্লাইসিন, ১৫। ট্রিপ্টোফ্যান, ১৭। গ্লুটামিন, ১৮।প্লুটামিক এসিড, ১৯। অ্যাসপার্টিক এসিড এবং ২০। ফিনাইল অ্যালানিন।
আরও দেখুন...